নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল-ঢাকা নৌ-রুটে যাত্রীবাহী বেসরকারি নৌযানগুলোতে সাধারণ সময়ে চাইলেও দেখা মিলছে না কেবিনের। তার মধ্যে বৃহস্পতিবার থেকে শনিবারের কেবিনের সংকট থাকে চরমে। যাত্রীরা বলছেন, আগের থেকে নৌযান ও কেবিনের সংখ্যা বাড়লে এ সমস্যার সমাধান হয়নি এখনো। তার ওপর বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) স্টিমার ও জাহাজগুলো নিয়মিতো না চলায় সংকটের মাত্রা অনকেটাই প্রকট হয়েছে। বিআইডব্লিউটিসির বরিশাল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহামারি করোনার সংক্রমণ শুরুর আগে বরিশাল-ঢাকা ওয়ানওয়ে রুটে সপ্তাহে চার দিন সরকারি যাত্রীবাহী স্টিমার ও জাহাজ চলাচল করতো। তবে করোনাকালীন সময়ে সারাদেশের সঙ্গে একযোগে রাষ্ট্রীয় এসব নৌযানও চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর নৌযান শুরু হলে প্রথম এক মাসের মতো সপ্তাহে দুই দিন স্টিমার ও জাহাজগুলো চলাচল করতো। এক মাস পর থেকে এ পর্যন্ত সপ্তাহে তিনদিন এ রুটে রাষ্ট্রীয় নৌযানগুলো চলাচল করছে। কিন্তু ২০১৭ সালের জুন মাসে সবশেষ হালনাগাদ হওয়া বিআইডব্লিউটিসির সরকারি ওয়েবসাইটে থাকা অভ্যন্তরীণ যাত্রীবাহী সেবার সময়সূচিতে দেখা যায় সপ্তাহে ছয় দিন ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে মোড়লগঞ্জ আবার মোড়লগঞ্জ থেকে বরিশাল হয়ে ঢাকা প্যাডেল স্টিমার ও জাহাজ চলাচল করতো। এছাড়া সপ্তাহে একদিন এ রুট হয়েই ঢাকা-খুলনা ও খুলনা থেকে ঢাকা যাত্রীবহন করতো প্যাডেল স্টিমার বা রকেট। যদিও বিআইডব্লিউটিসির বরিশালের ম্যানেজার জসিম উদ্দিন এসব বিষয়ে জানান, গত একবছর ধরে সপ্তাহে চার দিনের বেশি জাহাজ চলতে তিনি দেখেননি। বর্তমানে সপ্তাহে তিনদিন মোড়লগঞ্জ থেকে বরিশাল হয়ে ঢাকা আবার ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে মোড়লগঞ্জ পর্যন্ত সরকারি নৌসার্ভিস চলমান রয়েছে। তিনি জানান, করোনার কারণে বন্ধ থাকা নৌসার্ভিস শুরু হওয়ার পর যাত্রীর সংখ্যা স্বাভাবিকের থেকে কিছুটা কমেছিলো, তবে বর্তমানে স্বাভাবিক আছে। যদিও মাঝে মধ্যে কমও হয়। যেমন গত ২৭ ফেব্রুয়ারি হয়েছে ৯০ জন, আর তার আগের দিন হয়েছে ৩৫০ জন যাত্রী। বিআইডব্লিউটিসির অফিস প্রধানের সদ্য দায়িত্ব পাওয়া কে এম ইমরান জানান, বর্তমানে ঢাকা-বরিশাল নৌ রুটে প্যাডেল স্টিমার লেপচা ও এমভি মধুমতি জাহাজ যাত্রীসেবায় নিয়োজিত রয়েছে। যদিও সদ্য পিআরএল এ যাওয়া বিআইডব্লিউটিসির সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ জানান, প্যাডেল স্টিমার বা রকেট সার্ভিসে লেপচা ও টার্ন এবং জাহাজ সার্ভিসে এমভি মধুমতি ও বাঙ্গালি ঘুরে ফুরে সপ্তাহে তিনদিন বুধবার, শুক্রবার ও শনিবার মোড়লগঞ্জ থেকে বরিশাল হয়ে ঢাকা রুটে চলাচল করছে। তবে যাত্রীর সংখ্যা আগের মতো নেই। যদিও এ রুটের নিয়মিতো যাত্রীরা জানান, স্বাভাবিক সময়ে ২/১ দিন আগে যোগাযোগ না করলে বরিশাল-ঢাকা রুটের কোন লঞ্চে কোনো কেবিন পাওয়া যায় না, আবার সপ্তাহের মধ্যে বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবারসহ বিশেষ দিনগুলোতে তো কেবিন সোনার হরিণ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে সরকারি নৌযানে সার্ভিস আরও বাড়ানো প্রয়োজন। দিন যেমন বাড়ানো প্রয়োজন, তেমনি বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত জাহাজের সংখ্যাও বাড়ানো প্রয়োজন। আর ট্রিপ বাড়ানোর আগে বিষয়টি প্রচার করে যাত্রীসাধারণকে জানানোর উদ্যোগ নিলে সরকারি জাহাজের কেবিনও খালি থাকবে না। সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক আনিসুর রহমান স্বপন বলেন, নদীপথে যাতায়াত দক্ষিণাঞ্চলবাসীর জন্য একটা ঐতিহ্যের ব্যাপার। বিশেষ করে সরকারি যে প্যাডেল স্টিমার, যাকে আমরা রকেট বলি সেটি তো বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে। যাত্রীসেবায় সপ্তাহে সাত দিনই স্টিমার সার্ভিস চালু রাখা উচিত। তিনি জানান, যেখানে বেসরকারি লঞ্চগুলোতে যাত্রী টইটুম্বর থাকে, সেখানে সরকারি স্টিমার বা জাহাজের ক্ষেত্রে যাত্রী সংকটের কথা শোনা যায়। কিন্তু অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, যারা স্থানীয়ভাবে এর দায়িত্বে আছেন তারাই কেবিন ব্যতিত অন্য যাত্রীদের নিয়ে ঘাপলা করছেন।
Leave a Reply